ওয়াশিংটন থেকে এএফপি : মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সরকার বিরোধী তীব্র বিক্ষোভ চলছে। চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও চলছে নানা আঙ্গিকের বিচার বিশে-ষণ। বিশেষত বিশ্বের একক ক্ষমতাধর আমেরিকার অবস্থান নির্ণয়ে তৎপর বিশে-ষকরা। তারা বলছেন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের চলমান বিক্ষোভ বৃহদাংশে মার্কিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যা পুরোদস্তুর এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের দুর্বল অবস্থানকেই তুলে ধরছে। কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, ১৯৯০'র দশকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাকের কাছ থেকে কুয়েত মুক্ত করায় এবং একযুগ স্থায়ী আরব ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল বর্তমানে এর নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একনায়কতান্ত্রিক তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন ও জর্ডানে শুরু হয়েছে গণবিক্ষোভ। সরকার পরিবর্তনের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে এসব দেশের জনগণ। কিন্তু লক্ষ্য করার মতো ব্যাপার বিক্ষোভে উত্তাল সবগুলো দেশই বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র হিসেবে পরিচিত।
এদিকে সম্প্রতি ইরান ও সিরিয়া সমর্থিত হিজবুল্লাহর কারণে লেবাননে পশ্চিমা পন্থী সরকার ভেঙে গেছে। এছাড়া আরব-ইসরাইলী দ্বদ্বে ওয়াশিংটন দশকের পর দশক ধরে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসলেও গত বছর শান্তি আলোচনা ভেঙে গেলে বর্তমানে ফিলিস্তিনীরা জাতিসংঘের দিক থেকে মুখ ঘুরাতে শুরু করেছে। এ প্রেক্ষাপটে তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো শূন্যস্থান পূরণে আঞ্চলিক কূটনীতিতে ভূমিকা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বিশ্লেষক শিবলী তেলহামি এ কথা বলেন। ইউনিভাসি©র্ট অব ম্যারিল্যান্ডের রাষ্ট্র বিজ্ঞানী তেলহামি আরো বলেন, ‘গত এক দশকে এ অঞ্চলে যে মার্কিন প্রভাব কমেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।' তেলহামি বলেন, কুয়েতকে ইরাকী দখলমুক্ত করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী এ অঞ্চলে যে প্রভাব বলয় তৈরি করেছে তাকে কাজে লাগিয়েই যুক্তরাষ্ট্র আরব-ইসরাইল শান্তি আলোচনা শুরু করে। কিন্তু তিনি বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এ সমীকরণ পাল্টে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহতার পর আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা চালায় এবং এতে হাজার হাজার লোকের প্রাণহানিসহ কয়েক হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়। এছাড়া তীব্র হয় আমেরিকা বিরোধী মনোভাব। আর আমেরিকা বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিতে শুরু করে ইরান। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার অভিযোগ করেছে, ইরাক ও আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করছে ইরান। এছাড়া তেহরান লেবাননে হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের জঙ্গী গ্রুপ হামাস ও ইসলামী জিহাদ গ্রুপকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। কারনেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর বিশ্লেষক মারিনা ওত্তোওয়ে বলেন, ‘ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ইরানের প্রভাব বেশি।'
এদিকে ওত্তোওয়ে অভিযোগ করেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ লেবানন থেকে সিরিয়াকে জোরপূর্বক বিতাড়নের চেষ্টার মধ্যদিয়ে পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলেন।
তিনি বলেন, লেবানন থেকে সিরীয় সৈন্যরা জোরপূর্বক সরে গেলেও দামেস্ক পূর্বাস্থায় ফিরে আসায় পরিস্থিতি হয়ে পড়েছে আরো অস্থিতিশীল।
লেবাননে পশ্চিমাপন্থী জোট সরকার গত ১২ জানুয়ারি ভেঙে গেছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকান্ড নিয়ে জাতিসংঘ তদন্তের প্রেক্ষিতে কেবিনেট থেকে হিজবুল্লাহ ও তার মিত্রদের পদত্যাগের কারণে জোট সরকার ভেঙে যায়। এ সময় থেকেই সিরিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাজিব মিকাতিকে সমর্থন দিতে শুরু করে। কিন্তু বলা হচ্ছে নাজিব মিকাতি হিজবুল্লাহ নেতৃত্বাধীন গ্রুপের লোক।
এদিকে মার্কিন সমর্থিত ফিলিস্তিনী নেতা মাহমুদ আববাস যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে সরাসরি জাতিসংঘ ও ইউরোপের দিকে মুখ ঘুরাতে শুরু করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক শান্তি আলোচক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, সাপ্রতিক পরিবর্তনের প্রেততে তিউনিশিয়া ও মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক ও কার্যকর ভূমিকা ঠিক কি তা নির্ধারণে আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কারণ আরব-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ায় মিশরই মূলভিত্তি।
উড্রো উইলসন সেন্টারের বিশে-ষক মিলার আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সাপ্রতিক ঘটনা এ অঞ্চলে মার্কিন দূর্বলতাকেই স্পষ্ট করে তুলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র আর মূল চালিকাশক্তি নয়।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কখনই এমন কোন আঞ্চলিক শক্তিমত্তা ছিলনা যা দিয়ে সে ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। বরং তার যা রয়েছে তাতে তার হামবড়া ভাবই ফুটে ওঠে।
Monday, January 31, 2011
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল !
তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ লাভের স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি?
তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের স্বপ্ন পূরণ হতে আর কত দেরী? প্রায় ৬ বছর আগে ইইউতে আঙ্কারার প্রবেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ক্লাবে যোগদানের বিষয়টি এখনো তুরস্কের জন্য শুধু মায়া মরীচিকা হয়েই রইলো। এতে তুর্কীরা স্বাভাবিকভাবেই ক্রমবর্ধমান হারে হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সপ্তাহান্তে দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ভাষণদানকালে তুর্কী উপ-প্রধানমন্ত্রী আলী বারাকান অভিযোগ করেছেন, ইইউ ভেতর থেকে ক্রমশ খৃস্টান ক্লাবে পরিণত হচ্ছে।
তাহলে তুরস্কের ইইউ সদস্য পদ লাভের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধাটা কোথায়? আঙ্কারা ২০০৬ সালে ইইউ সদস্য পদলাভের জন্য দেনদরবার শুরু করে।
ইইউ'র মত মর্যাদাসম্পন্ন ক্লাবে প্রবেশ করতে তুর্কীদের সংস্কারের অনেকগুলো স্তর পার হতে হবে এবং ইউরোপীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার উপযুক্ত করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপীয় গোষ্ঠীতে প্রবেশাধিকার পেতে হলে তুর্কীদের অনেক আইন ও প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন করলেই হবে না তাদের সংবিধানেও অনেক সংশোধনী আনতে হবে। যেসব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক খারাপ ছিল তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই সম্পর্কোন্নয়ন ঘটেছে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় গঠিত তুর্কীরা ইউরোপীয় অনেক অঞ্চলসহ বিশ্বের বিশাল একটা সাম্রাজ্য শাসন করেছে। আর এখন সেই ইউরোপীয় ক্লাবে ঢুকতে তাদের এত কাঠখড় পুড়াতে হচ্ছে।
ইইউ'র সদস্য পদ লাভের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের আর কতদূর যেতে হবে? সাইপ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাকে ইইউ সদস্য পদ লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হয়। তুরস্ক এই দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফ্রান্স ও জার্মানীর মত ইইউর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশগুলো ইইউর সদস্য লাভের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল তুরস্ককে সদস্য পদ দানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে বলেছেন, এটি কোন ইউরোপীয় দেশ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই দুটি দেশেই বিপুলসংখ্যক মুসলমান ও তুর্কী বাস করে। এই বিরোধিতা শুধু এই দু'নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাবেক ফরাসী প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী জিসকার্ড দ্য এস্টেইন এবং ইইউ গঠনতন্ত্রের মূল স্থপতি তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ লাভের তীব্র বিরোধিতা করে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, তুর্কী জনগণের শতকরা ৯৫ ভাগই ইউরোপের মূল ভূখন্ডের বাইরে বসবাস করে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তুরস্ক যদি বাইরে থেকে এসে ইইউর সদস্য হয় তাহলে ইউরোপেরই অবসান ঘটবে।
এই যুদ্ধংদেহী কণ্ঠস্বর সম্ভবত বর্ণবৈষম্যের কারণেও হতে পারে। মূল ধারার উদারপন্থী ইউরোপে সাম্প্রতিককালে ইসলাম আতঙ্ক ক্রমবর্ধমান হারে অনুরনিত হচ্ছে। তুরস্কের ইউরোপীয় অভিযান সফল হতে হয়তো আরো অনেক সময় ব্যয় হবে এবং এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
এই অহেতুক বিলম্ব একটি অশোভন ব্যাপার। তুরস্ক ইতোমধ্যেই ন্যাটো, কাউন্সিল অব ইউরোপ ও ওইসিডির সদস্য। তাহলে ইইউ সদস্য পদ লাভের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা কোথায়? শুধু তাই নয়, ইইউ'র অধিবাসীরা ক্রমশ বুড়িয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ইউরোপ জুড়ে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তরুণ জনশক্তির মারাত্মক ঘাটতি ক্রমশ দেখা যাচ্ছে।
ইউরোপের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উদ্যমী, উজ্জীবিত ও তরুণ বিশাল তুর্কী জনশক্তি তাদের অবশ্যই প্রয়োজন। এটা এখন অনেকেই স্বীকার করছেন। ন্যাটোতে তুরস্কের সৈন্য সংখ্যাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান। এটা হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম তথা এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগস্থল।
ইসলাম ও খৃস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তুরস্কের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুততর হচ্ছে। এই দেশটি বিভিন্ন দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।
তুরস্ক এখন আর ইউরোপের ‘রুগ্ন মানুষ' নয়। তাদের এই সমৃদ্ধি মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। যদি এ অবস্থায় ইইউর দুয়ার তুরস্কের জন্য খুলে দেয়া হয় তাহলে তাদেরও অনেক লাভ হবে। -আরব নিউজ।
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণকে কেন্দ্র করে পুলিশের 'সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষ\ ১ পুলিশ নিহত\ আহত শতাধিক
দৈনিক সংগ্রামের পাতা থেকে
শ্রীনগর থেকে ফিরে আব্দুস সালাম : মুন্সিগঞ্জের আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির মহাসড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও পক্ষে-বিপক্ষের জনতার ত্রিমুখী ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক পুলিশ নিহত এবং পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। সংঘর্ষকালে বিক্ষুব্ধ জনতা চাষাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত বুধবার ঢাকার মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশে বাধা প্রদান এবং শ্রীনগর থানায় ৪ হাজার ২৬ জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটি গতকাল সোমবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের শ্রীনগর এবং সিরাজদিখান এলাকায়।
আড়িয়াল বিলের ৫টি ইউনিয়নের হাজার হাজার লোক সকাল থেকে লাঠিসোটা, রামদা, হকিস্টিক, দা ঝাড়ু নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। ফলে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সকল ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকে।
কর্মসূচি চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছনবাড়িতে অবরোধকারীদের সঙ্গে বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষাবলম্বনকারীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ টিয়ারসেল, রাবার বুলেট এবং জলকামান নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ দুই পক্ষকেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৫০ পুলিশ, ৪ সাংবাদিক, বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যানসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের মধ্যে এ.এসপি দেওয়ান মোহাম্মদ লালন, কনস্টবল জিয়াদ আহত অবস্থায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিকেলে ডিএসপি হাবিলদার মতিয়ার রহমানের মৃত্যু হয়।
সিরাজদিখান থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তফা কামাল পাশা গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল থেকে মহাসড়কের হাষাড়া পয়েন্টে অবস্থান গ্রহণ করে। সেখানে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শুকুমার রঞ্জন ঘোষের ৭/৮টি তোরণ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে এবং মহাসড়কের কুচিয়ামোড়া থেকে ছনবাড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গাছের গুড়ি ফেলে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিমান বন্দর নির্মাণের পক্ষের লোকজনরা অবস্থান নেয় ছনবাড়িতে এবং বিরোধীরা অবস্থান নেয় ষোলঘর, হাষাড়া এবং নিমতলী পয়েন্টে। উভয় পক্ষ সকাল থেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে অবরোধকারীরা মহাসড়কে অবস্থিত হাষাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং প্রথম আলোর সাংবাদিকের ১টি ও পুলিশের ১টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া পুলিশের ৩টি গাড়ি ভাংচুর করে।
আড়িয়ল বিল রক্ষাকমিটির যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমাদের জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের বাবার ভিটে রক্ষা করব।
আড়িয়াল বিলের অপর এক নেতা আব্দুল হাই জানান, শুকুমার রঞ্জন ঘোষ আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাকে আমরা ছাড়বো না। যে কোন মূল্যে আমরা আড়িয়াল বিল রক্ষা করব।
আড়িয়াল বিলে ক্ষতিগ্রস্ত অপর চাষী বলেন, আড়িয়ল বিল আমাদের রক্ষা করা ফরজ। এখানে বিমানবন্দর করতে আসলে তাকে জীবন নিয়ে যেতে দেব না।
বাড়ৈখালি ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মাস্টার জানান, আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর করতে হলে হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে করতে হবে। এখানে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে তবুও এখানে বিমানবন্দর হতে দিব না।
স্থানীয় মাতববর কাইয়ুম জানান, গ্রামের সকল ছেলেমেয়ে কাফনের কাপড় পরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে জীবন দিবে তবুও আড়িয়ল বিলে বিমান বন্দর হতে দিব না।
অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী জানান, আমাদের এখানে যে ফসল হয় তাতে এক বছর চাষীরা ঘরে বসে খেতে পারে। এখানে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে এখানকার লোকজন জীবিকা নির্বাহ করে। তাই এখানকার আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর হতে দেব না।
আড়িয়ল বিলের অপর এক গৃহিণী রেবেকা আক্তার জানান, আমরা এই বিলে কাজ করে খাই। এই বিলে বিমান বন্দর হলে আমরা না খেয়ে মারা যাবো। তাই এখানে বিমান বন্দর চাই না।
আড়িয়ল বিল রক্ষাকমিটির সভাপতি শাহজাহান বাদল জানান, আমরা আমাদের বিল রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে জীবন দিব তবুও বিমান বন্দর হতে দেবে না।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, বিকাল ৪টা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিবেশ আমাদের অনুকূলে। সকল ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। সিরাজিদখান থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তফা কামাল পাশার অবস্থা আশংকাজনক। সে সিসিইউতে রয়েছে। এএসপি দেওয়ান লালন আহম্মেদ ও কনস্টেবল জিয়াদকে আহত অবস্থায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও র্যা ব মহাসড়কের নিমতলী ও ষোলঘরে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ
জনগণের স্বার্থ ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে
অযৌক্তিক বিলাসী পরিকল্পনা বন্ধ করুন
-মকবুল আহমদ
আড়িয়ল বিলে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এলাকার সাধারণ জনগণের সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের সাথে জনগণের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হবার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ গতকাল সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ঢাকার উপকণ্ঠে আড়িয়ল বিলের ২৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তিনি বলেন, যে মুহূর্তে আমাদের দেশে খাদ্যের চরম সংকট সে মুহূর্তে আড়িয়ল বিলের ফসলী জমিতে বিমানবন্দর নির্মাণ জনস্বার্থ বিরোধী। এ স্থানে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার কৃষক কার্যত নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাছাড়াও পরিবেশ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে আড়িয়ল বিলের প্রাকৃতিক এ জলাধার বিনষ্ট হলে নিশ্চিত পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থেও এ আত্মবিনাশী কাজ থেকে ফিরে আসতে হবে। জনগণের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় যদি বিমানবন্দর নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আরো জানমালের ক্ষতি হবার আশংকা রয়েছে।
তিনি জনগণের স্বার্থ ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এ অযৌক্তিক ও বিলাসী পরিকল্পনা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বুধবার মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশে খোন্দকার দেলোয়ার
আড়িয়াল বিলের ঘটনা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত
সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই যুদ্ধাপরাধী
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, সরকারের ইচ্ছা জোর করে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মুন্সীগঞ্জে অহেতুক সংঘর্ষের সৃষ্টি করা হয়েছে । তিনি এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। আড়িয়াল বিল রক্ষাকারীদের আন্দোলনের সাথে বিএনপির একাত্মতা ঘোষণা করে দেলোয়ার বলেন, সরকার জনস্বার্থ বিরোধী কমকান্ড বন্ধ না করলে শুধু মুন্সীগঞ্জ নয়, সারা দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করা হবে। গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী প্রমুখ। এ ছাড়াও বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির অবনতি, পৌর নির্বাচনে ভোট ছিনতাই, নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে আগামী বুধবার রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। তিনি বলেন, জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করতে ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে জনগণের জন্য কিছু করলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হতো। তিনি বলেন, আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দরের কি দরকার। যে বিমানবন্দর আছে তাই ২৭ ভাগ ব্যবহার হয়। এই বিমানবন্দরের নামে ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে অর্ধেক লুটপাট করবে। আড়িয়াল বিলের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই এলাকার মানুষের স্বার্থ বিনষ্ট করে বিমানবন্দরের কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থ লুটপাট আর নিজের বাপের নাম দেয়ার জন্য এ বিমানবন্দর তৈরি করা হবে। আড়িয়াল বিলে যারা আন্দোলন করছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী, একাধিক মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের মতের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের সকল মানুষইতো এর বিরোধিতা করছে। তারা সবাই কি যুদ্ধাপরাধী?
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ, অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়োগকৃত এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, আগামীতেও হবে না। তারা সকল নির্বাচনে সরকারের পক্ষে ভোট কারচুপিতে সহায়তা করেছে। নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন যদি মডেল হয়-তাহলে কারচুপির নির্বাচন কোনটি। জনগণ দেখেছে, নির্বাচন কেমন হয়েছে। অথচ তিনি এই নির্বাচনকে মডেল বলে সরকারের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তিনি বলেন, একটি নীল নকশার পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছিলো। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই জনগণের জন্য তারা কিছু করছে না। তারা যেসব ওয়াদা নিয়ে এসেছিলো তার একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তারা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চুক্তির মাধ্যমে প্রভুদের খুশি করা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আইন-শৃক্মখলার অবনতি ও লুটপাটে দেশের মানুষ এখন দিশেহারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেদিন বলেন, আইন-শৃক্মখলা ভালো সেদিনই কয়েকটি লাশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, লন্ডনেও সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। তিনি বলেন, সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আগে পতাকা বৈঠক হতো, এখন তাও হয় না। এমনকি প্রতিবাদটুকুও করা হয় না।
চলতি অধিবেশনে বিএনপির সংসদে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দুই বছরেও বিরোধী দলের সংসদে ফেরার পরিবেশ তৈরি করেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয় আখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, ফেলানী হত্যায় সরকার প্রতিবাদ না করে জনবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়েছে।
পুলিশের ওপর হামলাকারীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
বিডি নিউজ : মুন্সীগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার। সোমবার জনতার হামলায় আহত চার পুলিশ সদস্যকে দেখতে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদও হাসপাতালে গিয়ে আহত পুলিশ সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন। হাসান মাহমুদ বলেন, ‘‘দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর অপরাধী ও দুষ্কৃতকারীরা হামলা করেছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা সোমবার সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং চার পুলিশসহ ৪২ জন আহত হন।
মুন্সীগঞ্জে সহিংসতা
খালেদার নির্দেশে আ. লীগ
যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধীদল আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে উস্কানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বলেছেন ‘‘একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিপথগামী করতে এবং আন্দোলনকারীরা যাতে সরকারের সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারে সে জন্য খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ নির্দেশে বিএনপি ক্যাডাররা এই ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছে।’’
এলাকাবাসীকে উস্কে দিতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। সোমবার শ্রীনগরে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার পর বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুকুমার রঞ্জন এ কথা বলেন।
তিনি আশ্বাস দেন, আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে শুধু জমির মালিকদেরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, যারা বিলে আয় থেকে বঞ্চিত হবেন তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম ইদ্রিস আলী, আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সরকার সব সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন তিন সংসদ।
পুলিশি হামলার নিন্দা
আড়িয়াল বিল
রক্ষার দাবিতে
আন্দোলন
স্টাফ রিপোর্টার : আড়িয়াল বিল রক্ষার দাবিতে জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বোরচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। একইসাথে বিল রক্ষা কমিটির দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন তারা।
ন্যাপ-ভাসানী
ন্যাপ-ভাসানী চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও মহাসচিব হাসরাত খান ভাসানী এক যুক্ত বিবৃতিতে আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটির ডাকে অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে বিনা উস্কানিতে পুলিশের হামলায় হতাহত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটির দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুললে বর্তমান সরকারের সাধ্য নেই বিমানবন্দর নির্মাণ করার। তাই অবিলম্বে প্রকল্পটি বাতিল করা হোক। নেতৃবৃন্দ আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
আড়িয়াল বিল রক্ষার দাবিতে এলাকার জনগণ ঢাকা মাওয়া সড়কে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে স্বৈরাচারী মহাজোট সরকারের দলীয় সন্ত্রাসী ও পেটেয়া পুলিশ বাহিনী বর্বোরচিত হামলা চালায়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্রি. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হুসাইন জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নেতৃবৃন্দ সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
ইন্ধনদাতাদের খুঁজে
বের করা হবে
-সাহারা
সংগ্রাম ডেস্ক : আড়িয়াল বিলে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া সড়কে সোমবারের সংহিস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১৫ জানুয়ারি নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, এ সহিংস ঘটনায় কারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করবে সরকার। ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে।
মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে নরসিংদীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেয়া প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নিহতরা হলেন- পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ফারুক আহমদ খান, পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. জিয়াউল খান, এসআই কংকন কুমার মন্ডল, মো. মাসুদ পারভেজ, মো. রেজাউল করিম, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বজলুর রহমান, রিয়াজ উদ্দিন, কৃষ্ণ কান্ত বর্মন ও প্রিয়তোষ চন্দ্র পাল।
পুলিশের ভাতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমাল হেফাজত করতে পুলিশ ঝুঁকি নেয়। ভবিষ্যতে পুলিশের আরো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের আট কি.মি. রণক্ষেত্র
আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার দিনভর এ বিক্ষোভে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন ৪০ পুলিশ সদস্য, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পাঁচ সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারী শতাধিক গ্রামবাসী। বিক্ষুব্ধ জনতা হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশের তিনটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশের চারটি অস্ত্র ও ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান (৪৫)।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এবং ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় বিস্তৃত আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিল রক্ষা কমিটির ডাকে স্থানীয় জনতা গতকাল ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল থেকে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল পাঁচটার পর যান চলাচল শুরু হয়।
আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ব্যানারে এলাকাবাসী মাস খানেক ধরে মিছিল, সভা-সমাবেশ করে আসছে। ২৬ জানুয়ারি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে তাদের সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া এবং ওই দিন সংঘর্ষের ঘটনায় দুই হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে গতকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে জানান বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টা থেকে আড়িয়ল বিলের ওপর নির্ভরশীল তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ পৃথক মিছিল নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের হাতে ছিল লাঠি, কুড়াল, রামদা, গুলতি ও ঝাড়ু। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পুলিশ-জনতা দফায় দফায় সংঘর্ষে মহাসড়কের প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল আটটা থেকেই মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের মোড়ে ও ধলেশ্বরী সেতুর কাছেসহ তিনটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ।
সকাল নয়টায় শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়ায় অল্প কিছু মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। অদূরে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডেও তখন খুব বেশি মানুষ দেখা যায়নি। সেখানে পুলিশের উপস্থিতির পাশাপাশি র্যাবের তিনটি গাড়ি টহল দিচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওই সড়ক জনতার দখলে চলে যায়। তখনো আশপাশের গ্রামের সড়ক দিয়ে লাঠি, দা হাতে নারী-পুরুষের খণ্ড খণ্ড মিছিল আসছিল। ১১টার মধ্যে ছনবাড়ী, হাসাড়া, শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের মাথায় সাদা কাপড়ের টুকরা বাঁধা ছিল। মুখে ছিল ‘আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর চাই না’ স্লোগান। গ্রামবাসী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে, করাতকল থেকে গাছের গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
১১টার দিকে শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ছবিসহ ঝোলানো ব্যানার ও গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ এগোতে চাইলে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ও গুলতি দিয়ে মারবেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশ পেছন ফিরে দৌড় দেয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ দল ভারী করে এসে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগান থেকে গুলি করতে করতে এগোতে থাকে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
সাড়ে ১১টার দিকে পুুলিশের একটি জলকামান শ্রীনগরের দিক থেকে রঙিন পানি ছিটাতে ছিটাতে হাসাড়ার দিকে এগোতে থাকে। গ্রামবাসীও জলকামানের গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করে। দ্রুত বেগে জলকামানটি ঢাকার দিকে চলে যায়। তখন গ্রামবাসী সামনে পড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রথম আলোর সাংবাদিকের একটিসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় তারা প্রথম আলোর প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা ও আলোকচিত্রী সাজিদ হোসেনের ওপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় এটিএন নিউজের আরাফাত সিদ্দিকী, বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান সোহেল আরমান, দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রী শফিউদ্দিনও আহত হন।
কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ গিয়ে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার হাজার গ্রামবাসী একযোগে পুলিশকে ধাওয়া দেয়। তারা সেখানকার পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ ও আগুন ধরিয়ে দেয়। ভেতরে আটকা পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। তখন পুলিশের ১৯টি গুলি লুট হয় বলে জানা গেছে।
কিছুক্ষণ পর আবার গ্রামবাসী এসে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি এবং রায়ট কারও বন্ধ হয়ে যায়। জনতা রায়ট কারের ওপর হামলা চালায়। তখন পুলিশ পিছু হটতে থাকলে জনতা কুপিয়ে ও পিটিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকে আহত করে। এ সময় পুলিশের কাছ থেকে তিনটি শটগান ও একটি গ্যাসগান লুট হয়। এরপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঢাল পেটাতে পেটাতে এগোতে থাকলে জনতা সরে যায়। তারপর আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমানকে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেলা আড়াইটার দিকে জনতা মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যায়। বিকেল পাঁচটার পর সড়ক পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।
সংঘর্ষ থামার পর পর মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম, পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আহসান, শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল লতিফসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
সংঘর্ষে অন্যান্যের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল ইসলাম, তিন সহকারী পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম, দেওয়ান লালন আহমেদ ও সাহেদ ফেরদৌস আহত হন। মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের অন্তত ৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০ পুলিশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এসআই মোস্তফা কামাল, হাবিলদার আবুল কালাম, নায়েক মফিজুল ইসলাম, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আজানকে। মিটফোর্ডে ভর্তি করা হয় হাবিলদার আবদুল হক, নায়েক গাজীউল ইসলাম, কনস্টেবল আলীমুদ্দিন, নজিউল্লাহ ও শাহাবুদ্দিনকে।
আহত গ্রামবাসীদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
মিটফোর্ডে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্য গাজীউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজারবাগ আর্মড পুলিশ বিভাগ থেকে তিনিসহ ছয়জন শ্রীনগর এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। উত্তেজিত প্রায় তিন-চার হাজার লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে জনতা রাস্তায় মোটা মোটা গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তখন পুলিশ জনতার দিকে এগিয়ে গেলে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
মতিউরের লাশ নওগাঁয়: ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত নয়টার দিকে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মতিউর রহমানের লাশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি নওগাঁয় পাঠানোর কথা। মতিউর নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চক আতিখা গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও অন্যদের আহত হওয়ার খবরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খন্দকার হাসান মাহমুদ, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন অবস্থায় কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার প্রস্তুতি: পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ হত্যা, অস্ত্র লুট, ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় একাধিক মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মামলায় কতজনকে আসামি করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা বসে ক্ষয়ক্ষতি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
রক্ষা কমিটির অভিযোগ: আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আন্দোলনকারী জনতা সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর হামলা করেনি। আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের লোকজন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। গত রাতে সংবাদপত্র কার্যালয়ে পাঠানো রক্ষা কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়।
সাংসদের বক্তব্য: সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, এই হামলা ও আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন রয়েছে।