Monday, January 31, 2011

তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ লাভের স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি?

তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের স্বপ্ন পূরণ হতে আর কত দেরী? প্রায় ৬ বছর আগে ইইউতে আঙ্কারার প্রবেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ক্লাবে যোগদানের বিষয়টি এখনো তুরস্কের জন্য শুধু মায়া মরীচিকা হয়েই রইলো। এতে তুর্কীরা স্বাভাবিকভাবেই ক্রমবর্ধমান হারে হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সপ্তাহান্তে দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ভাষণদানকালে তুর্কী উপ-প্রধানমন্ত্রী আলী বারাকান অভিযোগ করেছেন, ইইউ ভেতর থেকে ক্রমশ খৃস্টান ক্লাবে পরিণত হচ্ছে।
তাহলে তুরস্কের ইইউ সদস্য পদ লাভের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধাটা কোথায়? আঙ্কারা ২০০৬ সালে ইইউ সদস্য পদলাভের জন্য দেনদরবার শুরু করে।
ইইউ'র মত মর্যাদাসম্পন্ন ক্লাবে প্রবেশ করতে তুর্কীদের সংস্কারের অনেকগুলো স্তর পার হতে হবে এবং ইউরোপীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার উপযুক্ত করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপীয় গোষ্ঠীতে প্রবেশাধিকার পেতে হলে তুর্কীদের অনেক আইন ও প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন করলেই হবে না তাদের সংবিধানেও অনেক সংশোধনী আনতে হবে। যেসব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক খারাপ ছিল তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই সম্পর্কোন্নয়ন ঘটেছে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় গঠিত তুর্কীরা ইউরোপীয় অনেক অঞ্চলসহ বিশ্বের বিশাল একটা সাম্রাজ্য শাসন করেছে। আর এখন সেই ইউরোপীয় ক্লাবে ঢুকতে তাদের এত কাঠখড় পুড়াতে হচ্ছে।
ইইউ'র সদস্য পদ লাভের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের আর কতদূর যেতে হবে? সাইপ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাকে ইইউ সদস্য পদ লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হয়। তুরস্ক এই দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফ্রান্স ও জার্মানীর মত ইইউর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশগুলো ইইউর সদস্য লাভের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল তুরস্ককে সদস্য পদ দানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে বলেছেন, এটি কোন ইউরোপীয় দেশ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই দুটি দেশেই বিপুলসংখ্যক মুসলমান ও তুর্কী বাস করে। এই বিরোধিতা শুধু এই দু'নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাবেক ফরাসী প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরী জিসকার্ড দ্য এস্টেইন এবং ইইউ গঠনতন্ত্রের মূল স্থপতি তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ লাভের তীব্র বিরোধিতা করে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, তুর্কী জনগণের শতকরা ৯৫ ভাগই ইউরোপের মূল ভূখন্ডের বাইরে বসবাস করে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তুরস্ক যদি বাইরে থেকে এসে ইইউর সদস্য হয় তাহলে ইউরোপেরই অবসান ঘটবে।
এই যুদ্ধংদেহী কণ্ঠস্বর সম্ভবত বর্ণবৈষম্যের কারণেও হতে পারে। মূল ধারার উদারপন্থী ইউরোপে সাম্প্রতিককালে ইসলাম আতঙ্ক ক্রমবর্ধমান হারে অনুরনিত হচ্ছে। তুরস্কের ইউরোপীয় অভিযান সফল হতে হয়তো আরো অনেক সময় ব্যয় হবে এবং এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
এই অহেতুক বিলম্ব একটি অশোভন ব্যাপার। তুরস্ক ইতোমধ্যেই ন্যাটো, কাউন্সিল অব ইউরোপ ও ওইসিডির সদস্য। তাহলে ইইউ সদস্য পদ লাভের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা কোথায়? শুধু তাই নয়, ইইউ'র অধিবাসীরা ক্রমশ বুড়িয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ইউরোপ জুড়ে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তরুণ জনশক্তির মারাত্মক ঘাটতি ক্রমশ দেখা যাচ্ছে।
ইউরোপের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উদ্যমী, উজ্জীবিত ও তরুণ বিশাল তুর্কী জনশক্তি তাদের অবশ্যই প্রয়োজন। এটা এখন অনেকেই স্বীকার করছেন। ন্যাটোতে তুরস্কের সৈন্য সংখ্যাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান। এটা হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম তথা এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগস্থল।
ইসলাম ও খৃস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তুরস্কের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুততর হচ্ছে। এই দেশটি বিভিন্ন দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।
তুরস্ক এখন আর ইউরোপের ‘রুগ্ন মানুষ' নয়। তাদের এই সমৃদ্ধি মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। যদি এ অবস্থায় ইইউর দুয়ার তুরস্কের জন্য খুলে দেয়া হয় তাহলে তাদেরও অনেক লাভ হবে। -আরব নিউজ।

No comments:

Post a Comment